স্রোতস্বিনী ইছামতী নদীর পশ্চিম উপকূলে ঐতিহ্যশালী প্রাচীন নগরী টাকীতে কয়েকজন অনুরাগী ভক্তবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সূচনা হয় ১৯৩১ সালে। বর্তমানে আশ্রম পরিসরে শান্তি-মৈত্রী-সমন্বয় ও মানবপ্রেমের অবতার ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের একটি সার্বজনীন মন্দির রয়েছে। শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে শুরু থেকেই আশ্রম দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় তৎসহ ছাত্রাবাস। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য এখানে রয়েছে একটি হোমিওপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। এই আশ্রমের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষতঃ পিছিয়ে পড়া শিশুদের কাছে শিক্ষা পৌঁছিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন গ্রামে অবৈতনিক শিশুশিক্ষা কেন্দ্র চলছে “বিবেকানন্দ পাঠশালা” নামে । সেবাকার্যের মধ্যে নিয়মিতভাবে যেমন চলছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বনির্ভর প্রকল্প, তেমনি এই আশ্রম বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি ও ঝঞ্ঝাবাত্যা প্রভৃতি আপৎকালীন ত্রাণে যথাশক্তি নিয়োগ করে।
১৯৩১ সালে ১লা সেপ্টেম্বর টাকী শহরে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘ প্রতিষ্ঠা হলে সংঘের কর্মী ও ভক্তবৃন্দ সেবা কাজের সঙ্গে চরিত্রবান মানুষ গড়ার লক্ষ্যে বালকদের জন্য টাকী রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘ উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়‘ এবং বালিকাদের জন্য ‘কন্যা সারদাপীঠ‘ নামে বিদ্যালয় স্থাপন করেন। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সংঘকে ১৯৩৮ সালে রামকৃষ্ণ মিশন অধিগ্রহণের পরে বালক বিভাগের নাম হয় ‘টাকী রামকৃষ্ণ মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ও বালিকা বিভাগের নামকরণ হয় ‘টাকী রামকৃষ্ণ মিশন সারদা বিদ্যাপীঠ‘। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে চলার পর বালক বিভাগটি চালু থাকলেও বিভিন্ন কারণে পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বালিকা বিভাগটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে বলাবাহুল্য যে, টাকী শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ইছামতী নদীর ধারে জালালপুর গ্রামে অবহেলিত গরিব ও দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৩২ সাল থেকে টাকী রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘ কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছিল। ১৯৩৮ সালে টাকীতে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা হলে এর নাম হয় ‘জালালপুর রামকৃষ্ণ মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়‘। দীর্ঘদিন সুষ্ঠুভাবে চলার পর ২০১৫ সালে বিভিন্ন কারণবশত আশ্রম কর্তৃপক্ষ জমি ও বাড়ি সমেত বিদ্যালয়ের পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের হাতে তুলে দেন ।